তাওসিফ মাইমুন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। কেউ কেউ একাধিক আসনেও নির্বাচনের কথা ভাবছেন। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। জয়ের পরিকল্পনা থেকেই তুলনামূলক শক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।
ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের মধ্যে জেএসডি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ও গণফোরাম তাদের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবে নাগরিক ঐক্য ও কৌশলি জামায়াতে ইসলামী। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করতে নিজ নিজ দলের মধ্যে বৈঠক করছে শরিক দলগুলো। এরপর ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী তালিকা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা নেই তাঁর। যদিও দল ও জোট নেতারা চান, তিনি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এমনও হতে পারে ঢাকার ধানমন্ডি আসন থেকে নির্বাচন করবেন ড. কামাল। ওই আসন থেকে এর আগেও একাধিকবার গণফোরাম থেকে নির্বাচন করেন তিনি।
ঢাকা- ২ ও ৩
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু আগামী নির্বাচনে ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ দুটি আসন থেকেই নির্বাচন করার কথা ভাবছেন । কেরানীগঞ্জ উপজেলা আগে ঢাকা-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ২০০৮ থেকে এটি ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ আসনে ভাগ হয়ে যায়। ৮৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-৩ এর সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসনের চারবারের এমপি আমানউল্লাহ আমান এবার ঢাকা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর ঢাকাÑ৩ থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
টাঙ্গাইল- ৮ ও ১
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা কাদের সিদ্দিকী। টাঙ্গাইলের সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৮ এবং কালিহাতি দুই আসনে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করতে চান। দুটি না পেলে টাঙ্গাইল-১ আসন তিনি হাতছাড়া করতে চাইবেন না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বগুড়া-২ আসন নিয়ে সবচেয়ে সুবিধায় আছেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ আসনে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।
চট্রগ্রাম-১৩ ও ১৪
চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্রগ্রাম- ১৪ আসনটি ২০০৮ এর আগে চট্রগ্রাম- ১৩ আসন ছিল। এ আসনের চারবার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ। তবে গণফোরামের সূত্র বলছে, অলি আহমদ চট্রগ্রাম-১৩ থেকে লড়বেন। চট্রগ্রাম- ১৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। এ এলাকায় জামায়াতের ও প্রার্থী আছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে শাজাহান চৌধুরী এবং ২০০৮ সালে শামসুল ইসলাম জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। এবারও তারা দলের নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন কিনেছেন।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসন
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে পারেন। বিএনপি ও জেএসডির মধ্যে প্রতিবার লড়াই হয় এ আসনে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হলে রবের জন্য অবস্থা সুবিধাজনক হবে।
কুমিল্লা-৪ আসন
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন কুমিল্লা-৪ থেকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ওই সময়ে চারবারই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মনজুরুল আহসান মুন্সী। কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল আহসান আইনি জটিলতার কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। এবারও দলের হয়ে মাঠে আছেন তিনি। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাঁকেই আবার প্রার্থী হিসেবে চান। তাই ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি ও জেএসডির মধ্যে সমঝোতা লাগবে।
মৌলভীবাজার-২ আসন
কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসনে এবার ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লড়তে পারেন সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বর্তমানে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলে রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন
নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ-৫ থেকে নির্বাচন করতে চান। যদিও বিএনপির গত ছয়বারের প্রার্থী আবুল কালাম এবারও এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন।
সিলেট-১ আসন
বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।